জেনে রাখুন : গর্ভাবস্থায় মুখের স্বাস্থ্য
সঠিকভাবে দন্ত পরিচর্যা না করলে বা মুখের স্বাস্থ্য খারাপ হলে গর্ভকালীন জটিলতা সহ অপরিণত ও কম ওজনের বাচ্চা প্রসব হতে পারে।
মুখের স্বাস্থ্য খারাপ হলে হতে পারে যেসব সমস্যা:
হৃদরোগ
ব্রেইন স্ট্রোক
মুখের ক্যান্সার
ফুসফুসের রোগ
দাঁতের ক্ষয়
মুখে দুর্গন্ধ
ডায়াবেটিস
মাড়ির রোগ বৃদ্ধি
দাঁত পড়ে যাওয়া
সচেতন হউন, সুস্থ থাকুন।
জনশ্রুতি : মুখে দুই একটা দাঁত না থাকলে কি হয়?
বাস্তবতা :
দাঁত না থাকলে কামড়ের সমস্যা হয় এবং পিছনের দাঁত বাকা হয়ে সামনের দিকে হেলে যায়। ফলে চোয়ালের অস্থিসন্ধির উপর অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ পড়ে এবং তার ক্ষতি হয়।
জেনে রাখুন : ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করেন তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়। তাই প্রতিদিন রাতে একবার করে ফ্লস ব্যবহার করুন।
দুই দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা দন্তক্ষয় রোগ, মাড়ির রোগ, এমনকি স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে।
জেনে রাখুন : ভিটামিন ডি এর ঘাটতির প্রভাব
ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে দাঁতের বহি:বারণ পাতলা ও দুর্বল হয়। এর ফলে দন্তক্ষয়, দাঁত শিরশির করা এবং দাঁত ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
জেনে রাখুন : দাঁতের পরিচর্যার নিয়ম
ব্রাশ করার নিয়ম:
শুকনো ব্রাশ প্রথমে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে
পেস্ট ব্যবহারের পরিমাণ:
৩ বছরের নিচে শিশুদের জন্য: চালের দানার পরিমাণ
৩ বছরের উপরে শিশুদের জন্য: মটরশুঁটির বিচির সমান
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য: প্রয়োজনীয় পরিমাণ
এরপর আবার পানি দিয়ে ভিজিয়ে ২ মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করতে হবে যাতে দাঁতের প্রতিটি তলে ব্রাশ পৌঁছে
বাঁকা ব্রাশ ব্যবহারে ক্ষতি:
বেঁকে যাওয়া শলাকা ওয়ালা ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার হয় না। বরং এটি মাড়ির মারাত্মক ক্ষতি করে।
শিশুর মুখের স্বাস্থ্য ও দাঁত ব্রাশ করা:
৩ বছরের নিচে: ফ্লুরাইড-মুক্ত পেস্ট চালের দানার পরিমাণে
৩ বছরের উপরে: ফ্লুরাইড-যুক্ত পেস্ট মটরশুঁটির পরিমাণে
জেনে রাখুন : Heart Attack ও Stroke প্রতিরোধে মাড়ির যত্ন
প্রতিদিন ২ বেলা ব্রাশ করুন
রাতে একবার ফ্লসিং করুন
বছরে ১-২ বার ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন
জেনে রাখুন : মাড়ির রোগ ও আলঝেইমার সংযোগ
মাড়ির রোগ আলঝেইমার রোগের কারণ হতে পারে। এছাড়া মাড়ির জটিলতায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া Heart Attack এর কারণও হয়। গবেষণা বলছে: সপ্তাহে ১বার ফ্লসিং করলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা ২০% কমে যায়।
জেনে রাখুন দাঁত ব্রাশ করার গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলি:
প্রতিদিন ২ বার ব্রাশ করতে হবে (সকাল ও রাত)
খাওয়ার সাথে সাথে নয়, খাওয়ার ৩০-৬০ মিনিট পর ব্রাশ করুন
সব সময় নরম ব্রিসেলের ব্রাশ ব্যবহার করুন
ব্রাশ শুরুর আগে হালকা পানিতে ভিজিয়ে নিন
দাঁত, মাড়ি, জিহ্বা, গাল, তালু — সবকিছু ব্রাশ করুন
প্রতিবার ২ মিনিট ধরে আলতোভাবে ব্রাশ করুন
কখনোই জোরে বা দীর্ঘ সময় ধরে ব্রাশ করবেন না
প্রতি ৩ মাসে বা ব্রাশ বাঁকা হলে পরিবর্তন করুন
মুখে ঘা হলে সেরে গেলে ব্রাশ বদলান
কম এব্রেসিভ পেস্ট বা জেল ব্যবহার করুন
ব্রাশ কমোড থেকে অন্তত ৬ ফুট দূরে রাখুন
জেনে রাখুন : নিয়মিত সঠিক নিয়মে দাঁতের পরিচর্যা না করলে মাড়ি সড়ে যেতে পারে, তাই মুখের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব দিন, সুন্দর থাকুন।
জেনে রাখুন :
পরফাইরোমোনাস জিনজাইভালিস — দাঁতে থাকা ৬০০+ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে একটি। ২০১৯ সালে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি আলঝেইমার রোগীদের মস্তিষ্কে খুঁজে পাওয়া যায়, যা মূলত দাঁতের ক্যাভিটি ও মাড়ি থেকে রক্তনালির মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছায়।
জেনে রাখুন :
ধুমপান মাড়ির রোগের নিরব ঘাতক। ধুমপানের কারণে মাড়ির রোগ থাকলেও রক্তপাত কম হয়, তাই সঠিক সময়ে রোগ নির্নয় না হওয়ায় জটিলতা বাড়ে এবং দাঁত পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
জেনে রাখা ভালো :
গবেষণায় দেখা গেছে, মাড়ির রোগের কারণে নিউমোনিয়া, COPD, এজমা রোগের তীব্রতা বেড়ে যায়।
রমজান মাসে মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধে করণীয় :
রমজান মাসে মুখে দুর্গন্ধ হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। দীর্ঘ সময় খাবার না খাওয়ায় মুখে থুথুর পরিমাণ কমে যায়, ফলে মুখ শুষ্ক হয়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। এজন্য রমজানে মুখ ও দাঁতের যত্ন নেওয়া জরুরি:
১। মেসওয়াক ও টুথব্রাশের ব্যবহার:
সেহরি ও ইফতারের পর নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করুন
দিনে ওযুর আগে মেসওয়াক ব্যবহার করতে পারেন
২। প্রতিরাতে একবার ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন
৩। এলকোহল-মুক্ত মাউথওয়াশ দ্বারা গার্গল করুন
অথবা হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল
৪। পর্যাপ্ত পানি পান করুন
ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত ৮-১০ গ্লাস পানি
৫। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন
কম মিষ্টি ও গ্যাস উৎপাদক খাবার খান
রসালো ফল ও সবুজ শাকসবজি বেশি খান
৬। জিহ্বা পরিষ্কার রাখুন
৭। মাড়ি ম্যাসাজ করুন — এতে মাড়ি সতেজ ও সুস্থ থাকে।
এই নিয়মগুলো মেনে চললে রমজান মাসেও মুখ ও দাঁতের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা সম্ভব।
জনশ্রুতি নয়, শুনুন একজন বিশেষজ্ঞ ডেন্টিস্টের বাস্তব পরামর্শ। আজই যোগাযোগ করুন Dr. Anupam Podder-এর সাথে — আপনার সুস্থ হাসির জন্য।
সঠিক তথ্যেই থাকুক দাঁতের যত্ন!
